একটা সময় ছিল যখন প্রিয়জনের চিঠির আশায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হত। আর এখন কাগজে চিঠি লেখার অভ্যাস আছে এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোণা যায়। ক্যালেন্ডারে বছরের ঘরটার সংখ্যার মান বাড়ার সঙ্গে বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবনযাপন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আসছে প্রযুক্তি জগতে। আগামী দশ বছরের মধ্যে আমাদের জীবন থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে এমন কয়েকটি প্রজুক্তি ও যন্ত্র নিয়েই এবারের লেখা।
ল্যান্ডফোন
একসময় ঘরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানটায় স্বগর্বে বিরাজ করতো ল্যান্ডফোন। মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান দাপটে ল্যান্ডফোনের দিনগুলো এখন বিস্মৃতপ্রায়। বর্তমানে অনেকের কাছে ল্যান্ডফোন রাখাটা বরং উটকো ঝামেলাই মনে হয়। আগামী এক দশকের মধ্যে ল্যান্ডফোন একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।
কেবল টিভি
ইউটিউব কিংবা নেটফ্লিক্সের মতো ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসের যুগে কেবল টিভির প্রতি তরুনদের আকর্ষণ বেশ কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ের জনপ্রিয় বোকা বাক্স টেলিভিশনও ঘর থেকে চিরতরে বিদায় হবে ধারণা করা হচ্ছে।
হাতের লেখা
পুরোপুরিভাবে না হলেও আগামী এক দশকে হাতের লেখার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। বর্তমানে পড়াশোনা থেকে শুরু করে পণ্যসামগ্রীর বিল পর্যন্ত ইলেকট্রনিক মেশিনে করা হচ্ছে। এমনকি একজন ব্যক্তির স্বাক্ষরও কলমের সাহায্য ছাড়াই স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বই এবং সংবাদপত্র
বিশ্বব্যাপী কাগজের ব্যবহার কমাতে সংবাদপত্র এবং বইয়ের অনলাইন সংস্করণের পরিমান বেড়েই চলেছে। আর দশ বছর পর হয়তো বই বা সংবাদপত্র পড়তে ইন্টারনেটই হয়ে উঠবে একমাত্র অবলম্বন। তখন হয়তো প্যাকেজিং করার সময় কাগজের বদলে অন্য উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।
টর্চ
বর্তমানে অধিকাংশ মোবাইল ডিভাইসে ফ্ল্যাশলাইট রয়েছে। তাই আর কিছুদিন পর অনেকের হয়ত ব্যাটারি চালিত টর্চ দেখলে চিনতেও কষ্ট হবে।
টেপ রেকর্ডার এবং সিডি প্লেয়ার
এখন অনেক গ্যাজেটেই ইনবিল্ট মিউজিক প্লেয়ার রয়েছে। এছাড়া এ যুগেই সিডি কেনার প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ বেশ কমে গিয়েছে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন একসময়ে কষ্টের টাকায় কেনা অনেক প্রিয় টেপ রেকর্ডার বা সিডি প্লেয়ারটা এখন ঘরের কোণে অযত্নে পড়ে রয়েছে। আগামী দশ বছর পরে নতুন প্রজন্মের কাছে এসব ডিভাইস দেখলে অ্যান্টিক মনে হবার সম্ভাবনাই বেশি।
বিপণিবিতান
অনলাইন শপিংয়ের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে শপিং সেন্টারগুলোতে দোকানের সংখ্যাও একেবারে কমে যাবে। কে আর কষ্ট করে জ্যাম ঠেলে কেনাকাটা করবে যদি হোম ডেলিভারিতেই কাজ সারা যায়?
টেলিফোন ডিরেক্টরি
বাসায় হলুদ পাতার মোটা টেলিফোন ডিরেক্টরিটি এখন ধুলার আবরণে আবৃত। আর কয়েক বছর পর চিরকালের মতো বিশ্ব থেকে টেলিফোন ডিরেক্টরি নামক বস্তুটি হারিয়ে যাবে।
পার্সোনাল কম্পিউটার
বর্তমানে পার্সোনাল কম্পিউটারের মতো কাজ করতে সক্ষম ডিভাইসের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ভবিষ্যতে পিসির বদলে একই কর্মক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল, ট্যাবলেট ব্যবহার করবে অধিকাংশ মানুষ। এ ছাড়া প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এমন ব্লু টুথ স্ক্রিন বাজারে আসবে যাতে বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করা যায়।
ক্যালেন্ডার
কয়েকবছর আগেও বছরের শুরুতে কিংবা কোনো উপলক্ষের আগে আত্মীয়-স্বজনদের উপহার হিসেবে ক্যালেন্ডার দেয়ার চল ছিল। এছাড়া ধর্মীয় পবিত্র স্থান কিংবা প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত ক্যালেন্ডারের প্রতি সকলের দুর্বলতা ছিল। কিন্তু এখন তুলনামূলক বয়স্ক ব্যক্তিরা ছাড়া কারোরই এর প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। এক দশক পর তাই হয়তো দেয়ালে ক্যালেন্ডার লাগানোর সংস্কৃতি একেবারে বন্ধই হয়ে যাবে।
পোস্ট অফিস এবং পোস্ট বক্স
পোস্ট বক্স ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এখন ইমেইলের যুগে শুধুমাত্র চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদের পেনশন কিংবা দুর্গম এলাকায় সাধারণ সেভিংস অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের জন্য পোস্ট অফিসের দ্বারস্থ হতে হয়। ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে আধুনিকতার ধারাবাহিকতায় একসময় এসব কাজেও আর পোস্ট অফিস ব্যবহার করা হবেনা।
ড্রাইভিং
অবাক করার মতো ব্যাপার হলেও ভবিষ্যতে ড্রাইভিংরত মানুষের সংখ্যা বেশ কমে যাবে। টেক জায়ান্ট গুগল ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে চালকবিহীন গাড়ি চালু করেছে। একসময় সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়বে এবং ড্রাইভিং শেখার দরকারই পড়বেনা।